পেন্সিলে লিখা বাবার ডায়েরী (ধারাবাহিক উপন্যাসঃ পর্ব-২৪)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৪১:৪০ রাত
লাভলির চিঠিগুলিতে কিছু পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছিল। সে তার ঘরের মানুষের চেয়ে হলের সবকিছুর দিকে ঝুঁকে গেল। রুমমেটদের সাথে লেনদেন, ক্লাসের মজার বা তিক্ত কোন ঘটনা, পড়তে থাকা কোন উপন্যাস বা কবিতার বই, তার নিজের সম্পর্কে কারো মন্তব্য এসব ঘুরেফিরে আসতে লাগল। চিঠির পাতাসংখ্যা কমতে কমতে তিন পাতায় এসে স্থির হল। আমার সম্পর্কে তার আকুলতার জায়গাটা দখল করল আমার কুশল জিজ্ঞাসা - আমি কেমন আছি, শরীর ভালো কিনা, দিনকাল কেমন যাচ্ছে, বাদল, বাসার সবাই কেমন আছে, পড়শোনা কেমন হচ্ছে। পাড়ার খবর ও কখনো জানতে চায়। সব মিলে আমার জন্য কমবেশি সাত আটটা প্রশ্ন নির্ধারিত থাকল, শেষ পাতার শেষে। আহত প্রতীক্ষা আমার ভিতর এক ধরণের শুন্যতাবোধ সৃষ্টি করল। সেই শুন্যতা ধীরে ধীরে তিক্ততায় পরিণত হল। দূরত্ববোধ আমাকে তার প্রতি কিছুটা হিংস্র করে তুলল। আমি চিঠিতে দুই এক লাইন বাড়িয়ে লিখলাম কখনো, কখনো উত্তর দিতে দেরী করতে থাকলাম। হয়তো আমার উত্তরগুলি তাকে আহত করছিল। তার চিঠি আসতে দেরী হতে লাগল। আরো সংক্ষেপে, আরো নিস্পৃহ ভাষায়। প্রেম এক প্রতিশোধের খেলা হয়ে দাঁড়ালো। মনে হল," হৃদয়ে প্রেমের দিন কখন যে শেষ হয়, আমরা জানি না তাহা!" তীব্র জ্বালা জমাট বেঁধে গিয়ে এক ধরণের গা ছাড়া ভাব দু'জনকে দু'জনের কাছে কেমন যেন অচেনা করে তুলছিল। আমি যেখানে কিছু গুরুত্ব আর প্রশংসা পাচ্ছিলাম -সেই রাজনীতিতেই মন সমর্পণ করলাম পুরোপুরি।
আমার জীবন সম্পুর্ণ আমার ইচ্ছাধীনভাবে চলছিল বললে ভুল হবে। আমি তখন আর আমার নিজের ভিতরে ছিলাম না। কলেজের দৃশ্যমান রাজনীতির ছত্রছায়ায় গোপন দলটির বিভিন্ন কার্যক্রমে আমাকে অংশগ্রহন করতে হতো। রাস্তাঘাটও তখন এতোটা উন্নত ছিল না। চরমপন্থীরা সবাই মটর বাইক ব্যবহার করত কিংবা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করত। ওদেরকে সহজে চেনা যেতো না এবং এরা সাধারণ জনগণের ভিতরে সহজে মিশে থাকতো।
আগেই বলেছিলাম আমি ছিলাম সাদেক ভাইয়ের ডান হাত। দলের বিভিন্ন পোষ্টার, লিফলেট এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্যাক্স এসব কিছু পাঠাতে হতো। আর এই সবগুলো কাজ মানে এগুলোর ড্রাফট আমিই করতাম। সাদেক ভাইয়ের নির্দেশে অবশ্যই।
বি.এন.পি সরকার তখন দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী সরকারের অবসানের পর ক্ষমতায়। তাঁরা দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির একটা আমূল পরিবর্তন চাইলো। কিন্তু সব কিছুই তো আর চাইলেই হয় না। দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাই নিজেদের প্রয়োজনে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেছিলেন। আর বিরোধী আওয়ামী লীগতো পারলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি একেবারে ধুলায় মিশিয়ে দেয়। এটাই এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আওয়ামী বা বি.এন.পি কোনো ফ্যাক্টর নয়।
গোপন দলগুলো এই দুই দলের সাথেই ছিল। যদিও চরমপন্থিরা সব সময়েই এন্টি-গভার্নমেন্ট নীতিতে বিশ্বাসী। তারপরও সরকারি দলের সাথে গোপন সখ্যতা ছিল বিভিন্ন উপদলে ভিন্ন নাম নিয়ে এই চরমপন্থি দলগুলোর।
মিথিলা বাবু,
আজ তোমাকে বললে তুমি বিশ্বাস করবে না যে, পুলিশ প্রশাসনের অনেক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই দলের নেতাদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলতেন। নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। তাদের জন্য নিরাপত্তা দিতেন এই দলের নেতারা (পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণ না করে) আর বিনিময়ে কর্তারা কিছুটা খবরাখবর এবং অভিযানে একটু শিথিলতার প্রদর্শন করতেন- এসবই ছিল ওপেন সিক্রেট। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন এরকমই ছিল। অবশ্য পরবর্তীতে সরকার প্রধানদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোভাবের কারণে প্রশাসনের অইসব কর্মকর্তারাও মানসিকতার পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছিলেন। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আমার বন্ধু টিংকুর কথা তোমাকে আগেই বলেছিলাম। ওরা রায়ের মহল এলাকার জেলে পরিবারের ছিল। খুবই গরীব ছিল। একদিন জানতে পারলাম একটা মিটিঙে গিয়ে সে ই এখন আমাদের দলের একজন আঞ্চলিক নেতা। এখন তার নাম ‘গলা কাটা আতিক’!
আমি অনেকগুলো বছর পরে যেদিন ওর সাথে মুখোমুখি হলাম, সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। সেই টিংকু আর আজকের টিংকুতে আকাশ-পাতাল প্রভেদ। একটা শান্তশিষ্ট মানুষ কিভাবে জীবন-জীবিকার টানে এবং এলাকার প্রভাবশালীদের অত্যাচারে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেছে।
আমার সাথে সাদেক ভাইয়ের নির্দেশে সর্বক্ষণ এই টিংকু এবং ‘টাক জাহিদ’ থাকা শুরু করলো। টাক জাহিদও একটা ছদ্ম নামের আড়ালে ছিল। আজ পর্যন্ত আমি ওর আসল নাম জানতে পারিনি । পরবর্তীতে এই টিংকু এবং টাক জাহিদও খুন এবং এনকাউন্টারে নিহত হয়েছিল। টিংকুকে মেরেছিল আমাদের আর এক বন্ধু মিজান। সেও আমাদের বন্ধু ছিল এবং দলের কর্মী। কিন্তু যেদিন প্রকাশ্য বাজারে টিংকুকে মিজান মেরে ফেললো, আমি তখন অন্য এক জেলায় ছিলাম। খবরটা শুনে খুবই দুঃখ পেলাম। রাজনীতি! কতটা ঘৃণ্য পর্যায়ে চলে গেলে কেউ ছেলেবেলার এক বন্ধু আরেক জনকে এমন নির্মম ভাবে মেরে ফেলতে পারে!
টাক জাহিদের একটা হোণ্ডা ১১০ ছিল। প্রচণ্ড আওয়াজ দিতো সেটা। আমরা তিনজনে ওটায় চড়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াতাম। তখনকার খুলনা শহরে কয়েকটি পরিবার খুবই প্রভাবশালী ছিল। এদের ভিতরে নিরালার একটি পরিবার, আমাদের এলাকার সৈয়দেরা, দৌলতপুরের একটি আর এদের কে ছাপিয়েও তখন ঘাট এলাকার কয়েকজন নিজেদেরকে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে ধীরে ধীরে এক অন্য উচ্চতায় তুলে আনছিলেন। এদের ভিতরে মোসলেম সর্দার এবং এরশাদ শিকদার ছিল অন্যতম। তবে এরশাদ শিকদার মূলত চরমপন্থীদেরকে ঘাটাতো না। বেশ আগে সে পুর্ববাঙ্গলা কম্যুনিস্ট পার্টির জন্য সেই আশির দশকে অনেক টাকা খরচ করে একটি রেডিও ট্রান্সমিটার কিনে দিয়েছিল। সেই থেকে পার্টিও তার ব্যাপারে নাক গলাতো না।
ছোট খালু এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অনেকের সাথে এবং খুলনার প্রসাশনিক ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরাই তার জন্য বিপদ এবং বিপদ থেকে বেঁচে থাকার পথ দুটোই হয়েছিল।
খুলনার নিউমার্কেটের পুর্বপাশে রেলওয়ের যায়গায় এক মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল এরশাদ শিকদার। আমার জীবনে এমন প্রকাশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় রমরমা মাদকের ব্যবসা চলতে আর কোথায়ও দেখি নাই। বিমান অফিসটিও ছিল এই মাদক ব্যবসার পাশেই।
আর খুলনার বলাকা ক্লাব ছিল অঘোষিত পাওয়ার হাউস। এলাকাভিত্তিক কিছু প্রভাবশালী পরিবারের বড় ভাইয়েরা সেখানে একত্রিত হতেন। জুয়ার আড্ডা চলতো হরদম । ওনাদের ভিতরেও অনেকের সাথে পার্টির গোপন কানেকশন ছিল।
মোট কথা আমাদের সময়ে খুলনা শহর ছিল এক রক্তাক্ত জনপদ। যেখানে রক্তের হোলি খেলায় গোপন দলগুলো নিজেদেরকে রক্তাক্ত করে চলেছিল। প্রায় প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ এই দলের হয় সদস্য ছিল, না হয় পার্টিকে টাকা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তাকে বজায় রাখছিল। তখন আমাদের শহরের প্রধান ব্যবসা ছিল চিংড়ি মাছ। এটা পোশাক শিল্পের আগের সময়ে পাটের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নিয়ামক ছিল। আর এজন্য ঘের গুলো ছিল অপরিহার্য। বিস্তীর্ণ জমিগুলো একাধারে ধান চাষ এবং চিংড়ির চাষে ব্যবহৃত হতো। আর ডাকাতদের উপদ্রব থেকে ঘেরগুলোকে রক্ষা করার জন্য ঘের মালিকদেরকে সরকার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া শুরু করে। তবে এর একটা কুফলও হয়েছিল। একটা লাইসেন্স থাকলে তার সাথে মালিকেরা তাদের কর্মচারিদেরকে আরো দশটা অবৈধ অস্ত্রের যোগান দিয়ে দিচ্ছিলেন। কারণ চরমপন্থীরা আর ডাকাতেরা আসত অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে। সেখানে একটি বন্দুক দিয়ে আর কি ই বা করা যেতো। আর প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব ছিল না প্রতিটি ঘেরে ঘেরে গিয়ে নিরাপত্তা দেয়া। তখনকার পুলিশের কাছেও ছিল সেই মান্ধাতার আমলের থ্রি নট থ্রি রাইফেল, যা এ.কে.ফর্টিসেভেন, এস.এল.আর কিংবা নাইন এম.এম শুটারের সামনে কিছুই ছিল না। চরমপন্থীরাই আসলে ছিল ডাকাত। কিন্তু তাদের কাছে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। এজন্য ঘের মালিকেরাও তাদের ঘেরের নিরাপত্তায় কয়েকটি কাজ করা শুরু করলেন। তাঁরা ও অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করলেন, কিন্তু পার্টির সাথে কি আর এককভাবে পারা যায়? তাই তারাও পার্টির সাথে মিলে যেতে শুরু করলেন কিংবা টাকা দেয়া শুরু করলেন। আর এর ফলশ্রুতিতেই চরমপন্থি দলগুলোর নতুন ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের এক অভয়াশ্রম হয়ে উঠতে থাকলো এই মাছের ঘেরগুলো। রাতের আঁধারে সেখানে নিত্য নতুন অস্ত্র চালনার পাশাপাশি গোপন বৈঠকগুলোও হতে থাকে এই ঘের অঞ্চলে। কারণ সেখানে ফায়ার আর্মসের শব্দে প্রশাসন নাক গলাতো না। এটা ছিল তখন একধরণের রুটিন ওয়ার্ক।
আমার জীবনের প্রথম স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দেখলাম এরকম ই একটা মাছের ঘেরে। সাদেক ভাই নতুন কিছু সদস্য রিক্রুট করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। যথারীতি তার সাথে আমাকেও যেতে হল। এই প্রথম আমি পার্টির অস্ত্রভান্ডারের ভয়ংকর শীতল অস্ত্র গুলোর নীলচে ধাতব মৃত্যুর বিভীষিকা এনে দেয়া অনুভূতিতে শীতল হয়েছিলাম। আমার একাধারে গভীর আতংক আর অন্যরকম আনন্দ হচ্ছিল। আসলেই অস্ত্র এমনই একটা জিনিস যেটাকে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে, সেটা নিজের কাছে রাখতে ইচ্ছে করে। আর এটা সাথে থাকলে কাউকে কিছুই মনে হয় না। এক অজানা উষ্ণতায় দেহমন গরম হয়ে উঠে।
মিথিলা বাবু!
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অনেক নন-কমিশন্ড কে দেখেছি এই সব শিক্ষা নবিসদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে। এদেরকে টাকার বিনিময়ে ‘ভাইয়েরা’ নিয়ে আসতেন। তবে এরা পার্টির সদস্য ছিলেন না। এরা শুধু সামরিক কায়দায় এই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কর্মীদেরকে প্রশিক্ষন দিতেন। এই কর্মীরা ছিল সব সামরিক শাখার সদস্য। আমি যদিও রাজনৈতিক শাখার সদস্য ছিলাম, তবুও সাদেক ভাইয়ের সাথে থাকার কারণে আমাকে সব যায়গায় যেতে হতো।
একদিন কৈয়ে নামক এলাকায় গেলাম সাদেক ভাইয়ের সাথে। সেখানে আর এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হল। তিনি ছিলেন জাভেদ ভাই। তার গোপন নাম ছিল না ওটা। তিনি তার আসল নামেই প্রকাশমান ছিলেন। আমাদের পার্টির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন তিনি। আর রাজনৈতিক শাখার প্রধান ছিলেন সাদেক ভাই। এই জাভেদ ভাই এর বাড়ি ছিল খুলনার একেবারে শুরুতে। ফুলতলা এলাকায়। পার্টির খতমের রাজনীতির সকল ‘এক্সিকিউশন’ তার নির্দেশে ঘটত। তাঁকে দেখে আমি আসলেই অনেক ভয় পেয়েছিলাম। অনেক লম্বা, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং কালো ছিলেন তিনি। কোনো ধরণের নেশা করতেন না। আর পার্টির কাউকে নেশা করতে দেখলে কিংবা জানলে সকলের সামনে বেত দিয়ে তিনি নিজেই শাস্তি দিতেন।
এই মানুষটিকে সেদিন প্রথম দেখায় তার নামের অনুযায়ী যতটা ভয় পাবো বলে ভেবেছিলাম, ততটা পেলাম না। অনেক হাসিখুশী মানুষ মনে হল তাঁকে। তবে তিনি একাধারে ছিলেন এমন একজন পাথরে খোদাই করা মানুষ যিনি সময়ের প্রয়োজনে একেবারে গলে যেতে পারতেন আবার মুহুর্তেই পাষাণেই পরিণত হতে পারতেন।
পুর্ব বাংলা কম্যুনিস্ট পার্টির অন্যতম ক্যাডার সোহেলকেও আমি এই ঘেরেই প্রথম দেখেছিলাম। ওর আসল নাম যে কি ছিল সেটা মনে হয় সে নিজেও জানতো না। ওর অনেকগুলো নিক ছিল। গনেশ, সোহেল এ দুটোই সবাই জানত। সে শেষের দিকে এমনই ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল যে, মানুষ না মারলে কেমন অস্থির হয়ে থাকত। সে চলন্ত মটর বাইক একা চালানোর সময়ে দুই কাঁধে রাখা দুটি কাটা রাইফেল চালাতে পারতো। এতটা দক্ষ বাইক চালক এবং শার্প শ্যুটার এই গোপন দলে না এসে যদি পুলিশ বা সামরিক বাহিনীতে যেতো, সে হয়তো অনেক উপরে উঠতে পারত। পার্টির আভ্যন্তরীন বিরোধে সে খুলনা মেডিকেল কলেজের সীমানা দেয়ালের পাশে প্রস্রাবরত অবস্থায় পেছন থেকে হাতুড়ির আঘাতে নির্মম ভাবে মৃত্যুবরণ করে। তার শেষ সময়ে সে ফেন্সিডিল সিরাপে প্রচন্ড আসক্ত হয়ে পড়েছিল। ভাইয়েরা এগুলো জানলেও শুধুমাত্র সে সোহেল বলেই কেউ সেদিকে নজর দেয়নি । আর নেশাসক্ত থাকার কারণেই সে তার মৃত্যুকে এতটা কাছে থেকে দেখেও কিছুই করতে পারেনি। সে ছিল পার্টির অন্যতম একজন দুর্ধর্ষ ক্যাডার যে প্রতিটি মূহুর্ত হরিণের ন্যায় সাবধান থাকত।
মিথিলা বাবু!
আসলে এই গোপন দলটির কথা লিখতে গিয়ে আমি খেই হারিয়ে ফেলছি। একটা জিনিস মনে এলে আবার অন্য একটিতে ঢুকে যাচ্ছি। তবে আমার এই লিখার উদ্দেশ্যে হল, এই দলটির তাত্ত্বিক নেতারা শ্রমজীবি মানুষের কল্যাণে যে আন্দোলনের সূচনা করতে চেয়েছিলেন, সেটা আদৌ তাদের কর্মকান্ডে করতে পেরেছিলেন কি? কিংবা তাঁরা নিজেরা নিজেদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে তাদের তত্ত্বের অসারতা প্রমাণ করেছিলেন কিনা। আর এই আন্দোলনটি একটি শ্রেণিহীন সমাজ কায়েমের পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছিল? একেবারে নিরন্ন কিংবা ভূমিহীন মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আদৌ কিছু উন্নতি হয়েছিল কিনা? ধনীদের সারিতে নিজেরা দাঁড়িয়ে বরং পথ ভুলে যাননি কি?
এসব কিছু এই দলগুলোর বাস্তব কর্মকান্ডে তাদের নেতাদের ভূমিকা এবং কর্মীদের সে অনুযায়ী পরিচালিত করার ক্ষেত্রে তাদের সফলতা-ব্যর্থতাকে মূল্যায়ন করলেই সেটা বোঝা যাবে।
এই মূল্যায়নটা কে করবে?
তুমি, আমি, কিংবা অন্যরা?
জানি না।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৮২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন